পিএসসি নন ক্যাডার প্রিলিমিনারী প্রস্তুতি 

 (টেকনিক্যাল)
আসসালাম আলাইকুম। ১ম পর্বে লিখেছিলাম পরীক্ষার হলের কৌশল সম্পকে। আজ পড়াশুনার পদ্ধতি ও প্রয়োজনীয় বই সম্পর্কে লিখার চেষ্টা করবো।
পড়াশুনার পদ্ধতি ম্যান টু ম্যান ভেরি করে। একেকজন একেক ভাবে পড়তে পছন্দ করেন। এবং প্রত্যেকের পড়াশুনার জন্য আছে আলাদা নিজস্ব পদ্ধতি।
ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশুনায় যেমন বুঝে পড়ার গুরুত্ব বেশী, কিন্তু প্রিলিমিনারী পরীক্ষার ক্ষেত্রে মুখস্ত পড়াশুনাটা বেশী করতে হয়, ম্যাথ আর ইংরেজীর অল্প কিছু অংশ ব্যতিত পুরো প্রস্তুতি মুখস্ত নির্ভর। মুখস্ত নির্ভর পরীক্ষায় সাফল্য নির্ভর করে অধিক পড়াশুনার উপর এটা সত্য কথা।
অল্প সময়ে বেশী পড়তে গেলে যে সমস্যাটা হয় যে পড়াগুলে ভাসাভাসা হয়, পরীক্ষার হলে গিয়ে কনফিউশন সৃষ্টি হয়। যাদের মুখস্ত শক্তি অনেক ভালো তাদের কথা আলাদা। কিন্তু অধিকাংশের ক্ষেত্রে পড়াশুনাটা আগোছালো হয়ে যায়। এবং প্রতিটি পরীক্ষার পূর্বে আবার নতুন করে শুরু করতে হয় এবং ফলাফল প্রতিবার একইরকম হয়। এই ক্ষেত্রে যে টেকনিকটা অবলম্বন করবেন তা হলো যে, যেটুকু পড়বেন ভালো ভাবে পড়বেন। আমি সিলেবাসের যে বিষয় বা যে ট্রপিকটা পড়তাম সেটা ক্লিয়ার করে ফেলতাম যেন পরের বার সেটা না পড়তে হয় বা একবার একটু চোখ বুলিয়ে গেলেই চলে। এভাবে কয়েটা পরীক্ষা (মডেল টেষ্ট ও হতে পারে) দিলেই দেখবেন যে সিলেবাসের সিংহভাগ অংশ নিজের দখলে চলে আসছে। কিন্তু পুরো সিলেবাস কি এভাবে আয়ত্বে আনা সম্ভব? অনেকাংশে অসম্ভব। এখানে আপনাকে খুজে বের করতে আপনার স্ট্রং জোন আর উইক জোন। এবং সেটাকে কাজে লাগাতে হবে।
প্রথমে আপনাকে বের করতে হবে যে আপনি চারটি বিষয়ের মাঝে কোন বিষয়ে বেশী স্ট্রং?
স্ট্রং বিষয়ের কোন ট্রপিক গুলোতে দূর্বল? আর যে বিষয়ে আপনি দূর্বল সেই বিষয়ের কোন ট্রপিক গুলোতে আপনি কিছুটা স্ট্রং?
বিষয় ভিত্তিক আলেচনা শুরুর আগে দুটো বই এর নাম বলি এই বই দুটোর প্রতি আমি বিশেষ ভাবে দূর্বল
৩৬/৩৭ তম বিসিএস প্রিলিমিনারী বিশেষ সংখ্যা- একটা প্রফেসর প্রকাশনী, অন্যটা বিসিএস প্রকাশনী। এর মাঝে যদি ৩৮ এর বিশেষ সংখ্যা এসে যায় তাহলে সেটা পড়বেন। যাদের হতে সময় কম তারা শুধু এই বই শেষ করে পরীক্ষা দিতে পারেন, আশা করা যায় আপনার স্বল্প সময়ের প্রস্তুতির জন্য এর চেয়ে ভালো কোন বিকল্প নেই। এই বইয়ে একটা প্রশ্নও বাদ রাখবেন না। আর এটা শেষ না করতে পারলে অন্যগুলো পড়ার প্রয়োজন নেই বললেই চলে। নিচে বারবার আর বিশেষ সংখ্যার কথা উল্লেখ করবো না। এর বাইরে যারা অধিক প্রস্তুতি নিতে চান তাদের প্রয়োজনীয় বইগুলো নাম উল্লেখ করবো।
বাংলা দিয়ে শুরু করি....
আপনি শূন্য থেকে শুরু করলে যে বিষয়টা আপনাকে সহজে বেশী নম্বর পেতে সহযোগীতা করবে তা হলো বাংলা। বাংলা প্রশ্ন দুইটি অংশে বিভক্ত।
প্রথম অংশ হলো বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস ও সাহিত্যিক দের সাহিত্যকর্ম।
এই অংশে বাংলা সাহিত্যের বিভিন্ন যুগ ও এর ইতিহাস থেকে প্রশ্ন আসে, বিখ্যাত সাহিত্যিক দের সাহিত্যকর্ম ও উক্তি আসে।
আর ২য় অংশ হলো বাংলা ব্যাকরণ।
এই অংশের প্রস্তুতির জন্য বাংলা Mp3 বইটা পড়া যেতে পারে।
বাংলা সবার ই স্ট্রং জোন হওয়ার কথা, বাংলাতে বেশী সময় দিন,আশা করি এটা ভালো ফলাফল দেবে। বাংলার ২৫ থেকে ২০ নম্বর পাওয়া খুব কঠিন না। আর এটা করতে পারলেই আপনি অনেকটা এগিয়ে যাবেন। আমি প্রথম পরীক্ষার আগে আমার শিক্ষককে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কোনটা পড়বো, উনি বলেছিলেন বাংলা, কারন ম্যাথ ইঞ্জিনিয়াররা এমনিতেই পারে।
এবার আসি ম্যাথে, এই অংশটা আমার সবচেয়ে স্ট্রং জোন ছিলো, কিন্তু এখান থেকে মাত্র ১৫/১৬ নম্বর থাকে। ২৫ হতে যে বাকি অংশ তা চলে যায় সাধারন বিজ্ঞান এর ভাগে। সবচেয়ে বেশী ম্যাথ আসে পাটিগণিত থেকে। তারপর জ্যামিতি, বীজগণিত ও ত্রিকোণমিতি থেকে।
এই অংশে ভালো করার জন্য আপনি ৭-৯/১০ শ্রেণীর ম্যাথ গুলো করতে পারেন। একদম বেসিক প্রশ্ন হয়, সব করতে হবে না, শুধু দেখবেন যে কোন ট্রপিক গুলো ভূলে গেছেন, সেগুলোতে একটু চোখ বুলিয়ে নিবেন। এক্ষেত্রে ভূলে যাওয়া ট্রপিক খুজে বের করতে প্রথমে বিসিএস প্রশ্ন ব্যাংক বা মডেল টেষ্ট সলভ করুন তাতেই বুঝতে পারবেন আপনি কোন অংশে দূর্বল, এবার আপনি ঐ অংশের প্রস্তুতি নিন। এছাড়া Mp3 ম্যাথ বা এই ধরনের ম্যাথের যে কোন বই দেখতে পারেন।
সাধারন বিজ্ঞান অংশে পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান ও আধুনিক বিজ্ঞান থেকে প্রশ্ন আসে। এই অংশে ভালো করা আপনার বেসিকের উপর। যাদের সাইন্স ছিলো তারা এ অংশে ভালো করে। যেকোন একটি ডাইজেস্ট থেকে এই অংশ দেখে নিতে পারেন।
ইংরেজিও বাংলার মত দুই অংশে বিভক্ত। ইংরেজি গ্রামার অংশে ভালো করা আপনার বেসিকের উপর নির্ভর করে, যারা এই অংশে ভালো করতে ইচ্ছুক তারা English for competitive exams বইটি দেখতে পারেন।
যাদের ইংরেজির বেসিক দূর্বল তারা ইংরেজির ২য় অংশ ইংরেজি সাহিত্য ও এর ইতিহাসকে টার্গেট করতে পারেন। ঝটপট কয়েকজন বিখ্যাত ইংরেজি সাহিত্যিক এর সাহিত্যকর্ম মুখস্ত করে ফেলতে পারেন। আপনার দূর্বল জোন থেকেও অল্প পরিশ্রমে কিছু নম্বর তুলে ফেলে এগিয়ে যেতে পারেন আরো একধাপ। সর্বশেষ সাধারন জ্ঞান। এই অংশের জন্য বাংলাদেশের ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশ ভালো করে পড়ুন এতে একদিকে যেমন দেশের ইতিহাস জানবেন অন্যদিকে প্রিলি, লিখিত ভাইবা সব পরীক্ষাতেই প্রশ্ন পাবেন এই অংশ থেকে।
এরপর আন্তর্জাতিক অংশ থেকে বিভিন্ন সংস্থা সম্পর্কে বিস্তারিত পড়ুন, দেশের মুদ্রা, বিভিন্ন প্রণালী, যুদ্ধ, চুক্তি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ। এই অংশের জন্য আজকের বিশ্ব অথবা যেকোন একটি ডাইজেস্ট থেকে এই অংশ দেখে নিতে পারেন।
সম্প্রতিক বাংলাদেশ ও বিশ্ব অংশের জন্য পত্রিকায় নিয়মিত চোখ রাখতে পারেন, সম্ভব না হলে কারেন্ট এ্যাফেয়ার্স পড়ে ফেলুন প্রতি মাসে। এছাড়াও ভূগোল বা আরো কিছু অংশ থেকেও অল্প কিছু প্রশ্ন আসে।
আর সাধারন জ্ঞান অংশের জন্য লিখিত আর প্রিলি দুটোর জন্য পড়াশুনা একই রকম, তাই এই অংশের পড়াশুনা আপনাকে লিখিততে এক ধাপ এগিয়ে রাখবে।
সাধারন জ্ঞান অংশটা জানার নিয়তে পড়লে দেখবেন পড়াটা কঠিন লাগছে না, আর সহজে মনে থাকবে। যখন অন্যপড়া পড়তে বিরক্তি লাগবে তখন সাধারন জ্ঞান পড়তে পারেন। যদি আউট বই পড়া আপনার শখ হয়ে থাকে তাহলে এটা আপনাকে সেই স্বাদ দিবে।
সিলেবাস আর বই সম্পর্কে ধারনা তো হলো।
এখন আপনি আপনার সিলেবাসকে সাজিয়ে নিন। কোন অংশে আপনার টার্গেট কত?
আর শুধু পঞ্চাশ নম্বরের টার্গেট নিয়ে কিন্তু পড়াশুনা শুরু করবেন না।
ইঞ্জিনিয়ারিং এ সেফটি ফ্যাক্টর বলে একটা শব্দ আছে সেটা মাথায় রাখুন, এত স্বপ্ন ও প্রত্যাশার প্রজেক্ট (সরকারি চাকুরী) যদি কোন দূর্যোগে (প্রশ্ন কঠিন হওয়া বা কাট মার্ক বেড়ে যাওয়া) ফেল করে তাহলে চলবে?
সে জন্য নূন্যতম ৭০ মার্ক লক্ষ্য ধরে প্রস্তুতি নিন।
এবং মাঝে মাঝে প্রজেক্ট এর অগ্রগতি পর্যবেক্ষন করুন। সেই জন্য বিসিএস প্রশ্ন ব্যাংক বা নন ক্যাডার প্রশ্ন ব্যাংক কিনে ফেলুন, আর নিজে নিজে সলভ করুন। দেখুন আপনি কোন অংশে আপনার লক্ষ্য থেকে কতটা পিছিয়ে আছেন, সেই অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন (ঐ ট্রপিকে পড়াশুনা) করুন।
ইনশাআল্লাহ আপনি সফল হবেন এই বিশ্বাসটুকু রাখুন।
শুভ কামনা রইলো সবার জন্য......

Post a Comment

Previous Post Next Post